লিখেছেন গোলাপ
"যে মুহাম্মদ (সাঃ) কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।"
স্বঘোষিত
আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) খায়বারের নিরীহ জনপদবাসীদের খুন, জখম ও বন্দী করে
দাস ও যৌনদাসী রূপে রূপান্তরিত করার পর তাঁদের আল-নাটা ও আল-শিইখ অঞ্চলের সমস্ত
লুণ্ঠিত সম্পদ কী প্রক্রিয়ায় তাঁর অনুসারীদের মধ্যে বিলি-বণ্টন করেছিলেন, আদি উৎসে
বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই প্রাণবন্ত বর্ণনার আলোকে তার আলোচনা আগের পর্বে করা
হয়েছে।
আদি উৎসে নথিভুক্ত এই সকল অত্যন্ত স্পষ্ট ও প্রাণবন্ত
ইতিহাসগুলোকে পরবর্তী প্রজন্মের তথাকথিত
মডারেট ইসলাম-বিশ্বাসী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতরা (অধিকাংশই না জেনে) তাঁদের নিজেদের
সুবিধামত মিথ্যাচার, তথ্য-গোপন ও তথ্য-বিকৃতির মাধ্যমে উপস্থাপন করে যুগে যুগে সাধারণ
সরলপ্রাণ অজ্ঞ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করেচলেছেন (পর্ব: ৪৫); কী কারণে তাঁদের এই অসৎ প্রচেষ্টা আজও অব্যাহত আছে ও যতদিন ইসলাম
বেঁচে থাকবে, ততদিন তা কী কারণে বলবত থাকবে, তার আলোচনা 'জ্ঞান তত্ত্ব (পর্ব: ১০)’
পর্বে করা হয়েছে।
এই
ইতিহাসগুলো লেখা হয়েছে মুহাম্মদের মৃত্যু-পরবর্তী সবচেয়ে নিকটবর্তী সময়ে, যা এখনও
সহজলভ্য। উৎসাহী পাঠকরা ইচ্ছে করলেই তা বিভিন্ন উৎস থেকে অনায়াসেই খুঁজে নিয়ে
প্রকৃত তথ্য জেনে নিতে পারেন। ইসলামকে
সঠিকভাবে জানতে হলে "মুহাম্মদ-কে
জানতেই হবে!" এর কোনোই বিকল্প নেই। ইসলামে কোনো কোমল, মডারেট বা
উগ্রবাদী শ্রেণীবিভাগ নেই! ইসলাম একটিই, আর তা হলো মুহাম্মদের ইসলাম।
আল-ওয়াকিদির (৭৪৮-৮২২ খ্রিষ্টাব্দ) অব্যাহত
বিস্তারিত বর্ণনার পুনরারম্ভ: [1]
‘ইবনে ওয়াকিদ বলেছেন: আমাদের মধ্যে
আল-কাতিবার বিষয়টি বিতর্কিত; কেউ কেউ বলে: এটির সম্পূর্ণই ছিল আল্লাহর নবীর জন্য, মুসলমানরা এ ব্যাপারে মনক্ষুণ্ণ ছিল না। নিঃসন্দেহে তা ছিল
নবীর জন্য। ইবনে ঘুফায়ের-এর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আবদুল্লাহ বিন নুহ, ও বশির বিন ইয়াসার-এর কাছ
থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মুসা বিন আমর বিন আবদুল্লাহ বিন রাফি, ও নিজ পিতার কাছ থেকে
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ইবরাহিম বিন জাফর আমাকে বলেছেন যে, এক ভাষ্যকার তাকে
বলেছেন, যা তিনি বলেছেন: খায়বারে আল্লাহর নবীর
এক-পঞ্চমাংশ হিস্যাটি এসেছিল আল-শিইখ ও আল-নাটা
থেকে।
আবু বকর
বিন মুহাম্মদ বিন আমর বিন হিযাম-এর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কুদামা বিন মুসা
আমাকে বলেছেন, যা তিনি বলেছেন: উমর বিন আবদুল আজিজ [৬৮২-৭২০ খ্রিষ্টাব্দ] তার শাসন
আমলে আমার কাছে চিঠিতে যা লিখেছিলেন, তা হলো, "আমার জন্য আল-কাতিবা বিষয়টি তদন্ত
করো!" আবু বকর বলেছেন: আমি আমরা বিনতে আবদ আল-রহমানকে জিজ্ঞাসা করি, সে
বলেছে: বাস্তবিকই যখন আল্লাহর নবী বানু আবি আল-হুকায়েক-এর সাথে শান্তি চুক্তি
করেন, তিনি নাটা, আল-শিইখ ও আল-কাতিবা পাঁচটি ভাগে ভাগ করেন। আল-কাতিবা ছিল তারই
এক অংশ। আল্লাহর নবী তা পাঁচ "ভাগে ভাগ" করেন ও তা থেকে এক ভাগ আল্লাহর জন্য
নির্দিষ্ট করেন। অতঃপর আল্লার নবী বলেন, "হে
আল্লাহ, আমি তোমার অংশটি আল-কাতিবা এলাকায় নির্ধারণ করবো।" প্রথমেই যে
ভাগটি নির্ধারণ করা হয়, তাতে লেখা ছিল আল-কাতিবা। সুতরাং
আল-কাতিবা ছিল আল্লাহর নবীর এক-পঞ্চমাংশ। অন্যান্য
অংশগুলো চিহ্নিত করা হয়নি। সেগুলো ছিল
মুসলমানদের জন্য আঠারটি ভাগে ভাগ করা। আবু বকর বলেছেন: আমি উমর বিন আবদুল আজিজ-কে
এই বিষয়টি লিখে জানাই।" [3]
হিযাম বিন
সা'দ বিন মুহায়েয়িসা হইতে > আবু মালিক হইতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আবু বকর বিন আবি
সাবরা আমাকে জানিয়েছেন, তিনি যা বলেছেন: যখন আল্লাহর নবীর অংশটি গ্রহণ করা হয়, আল-শিইখ ও আল-নাটা মুসলমানদের জন্য সমভাবে চার-পঞ্চমাংশ
হিস্যার অংশ হিসাবে অধিষ্ঠিত হয়।
সা'ইদ বিন আল-মুসায়েব হইতে > আবু
মালিক আল-হিমায়েরি হইতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আবদুল্লাহ বিন আউন; এবং আল-যুহরি হইতে হইতে
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মুহাম্মদ আমাকে জানিয়েছেন। তারা যা বলেছেন: আল-কাতিবা ছিল আল্লাহর
নবীর এক-পঞ্চমাংশ হিস্যার অংশ। তিনি বলেন: আল্লাহর নবী আল-কাতিবা
অংশ থেকে খাবার খান ও তা থেকে তাঁর পরিবারের খরচ প্রদান করেন।
ইবনে ওয়াকিদ বলেন: আমাদের সঙ্গে যা
নিশ্চিত করা হয়েছে, তা হলো - খায়বারে এটিই ছিল আল্লাহর নবীর এক-পঞ্চমাংশ হিস্যা।
আল্লাহর নবী শুধুমাত্র আল-নাটা ও আল-শিইখ থেকেই খাবার খাননি, তিনি সেখানে
মুসলমানদের জন্য হিস্যা নির্ধারণ করেন। আল-কাতিবা ছিল সেই স্থান, যেখান থেকে তিনি
খাবার খেয়েছিলেন। যা অনুমান করা হয়, তা হলো - আল-কাতিবায় আট হাজার ব্যারেল খেজুর ছিল।
তার অর্ধেক ছিল ইহুদিদের জন্য, অর্থাৎ চার হাজার ব্যারেল।
আল-কাতিবায় বার্লি বপন করা হয়েছিল ও
সেখান থেকে কাটা হয়েছিল তিন হাজার পরিমাপ, যার অর্ধেক ছিল আল্লার নবীর জন্য;
অর্থাৎ, দেড় হাজার পরিমাপ বার্লি। সেখানে ছিল খেজুরের বিচি, সম্ভবতঃ যা থেকে সংগ্রহ
করা হয়েছিল প্রায় এক হাজার পরিমাপ; যার অর্ধেক ছিল আল্লাহর নবীর জন্য। আল্লাহর নবী এই সমস্ত
বার্লি, খেজুর ও খেজুরের বিচি থেকে মুসলমানদের দান করেন।'---- [*]
[[*] বানু নাদির (পর্ব: ৫২ ও ৭৫) গোত্র ও বানু কেইনুকা গোত্র উচ্ছেদের (পর্ব-৫১)
মতই মুহাম্মদ খায়বারের ইহুদিদেরও ভিটে-মাটি থেকে বিতাড়িত করতে চেয়েছিলেন, তাঁরা
রক্ষা পেয়েছিলেন এই শর্তে যে, তাঁরা মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের গ্রাস করা “তাঁদেরই
জমিতে ফল ও ফসল উৎপাদন” করে উৎপন্ন সেই ফল ও ফসলের অর্ধেকই (৫০ শতাংশ) তাঁদের
ভূমির এই নব্য মালিকদের দিয়ে দেবেন। এ বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা "খায়বারে
ইহুদিদের পরিণতি!" পর্বে করা হবে।]
মুহাম্মদ
ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) বর্ণনা: [2]
'অতঃপর
আল্লাহর নবী আল-কাতিবার অংশ, যেটি ছিল খাস উপত্যকায়, তাঁর আত্মীয়-স্বজন, স্ত্রী ও
অন্যান্য পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে বণ্টন করেন। তিনি তা প্রদান করেন তাঁর